লেবানন: সবচেয়ে বড় দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ হয়ে পুরো দেশ অন্ধকারে ডুবে যাবার পর সেনাবাহিনী নেমেছে সহায়তায় | Lebanon: Army comes to the rescue after two of its largest power plants shut down and plunged the country into darkness

বিদ্যুত সঙ্কটে দোকানের মধ্যে এক নারী তার মোবাইল ফোনের আলো ব্যবহার করছেন

লেবাননে জাতীয় বিদ্যুত গ্রিড বন্ধ হয়ে যাবার পর অনেক মানুষ এখন পুরোপুরি নির্ভর করছে ব্যক্তিগত জেনারেটরের ওপর

লেবাননে চরম বিদ্যুত সঙ্কটের কারণে দেশটির দুটি প্রধান বিদ্যুতের গ্রিড শনিবার বন্ধ হয়ে যাওয়ার একদিন পর রবিবার একটি গ্রিড পুনরায় চালু করার জন্য সেনাবাহিনী তাদের কিছু জ্বালানি হস্তান্তর করেছে বলে জানাচ্ছেন লেবাননের জ্বালানি কর্মকর্তারা।

এর ফলে তিনদিন বিদ্যুতের সরবরাহ থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বিদ্যুত সরবরাহকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি বলছে, তারা এখন আগের মাত্রায় বিদ্যুত সরবরাহ করছে। তবে তারা দিনে শুধুমাত্র এক থেকে দুই ঘণ্টার জন্য বিদ্যুত দিতে পারছে। একারণে লোকজনকে নির্ভর করতে হচ্ছে ব্যয়বহুল বেসরকারি জেনারেটরের ওপর।

একজন সরকারি কর্মকর্তা রয়টার্স সংবাদ সংস্থাকে বলেছেন, শনিবার দেইর আম্মার এবং জাহরানিতে অবস্থিত দেশটির সবচেয়ে বড় দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে পুরো দেশ অন্ধকারে ডুবে যায়।

বিদ্যুতের গ্রিড ''শনিবার দুপুর বারোটার সময় সম্পূর্ণ অচল হয়ে গেছে" এবং আগামী বেশ কয়েকদিনের আগে সেগুলো আবার চালু করা সম্ভব হবে না বলে সরকার শনিবাার জানায়।

গত ১৮ মাস ধরে লেবানন বড়ধরনের অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে এবং দেশটিতে জ্বালানির চরম সঙ্কট দেখা দিয়েছে।

অর্থনৈতিক সঙ্কটের ফলে দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠী দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। দেশটিতে মুদ্রা সঙ্কট তৈরি হয়েছে এবং রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে ব্যাপক আকারে বিক্ষোভ প্রতিবাদ চলছে।

দেশটিতে বৈদেশিক মুদ্রার ব্যাপক ঘাটতির ফলে বিদেশী জ্বালানি সরবরাহকারীদের কাছ থেকে জ্বালানি কেনার অর্থও দেশটির কোষাগারে নেই।

বৈরুতের উপকণ্ঠে বাসাবাড়িতে বেসরকারি ভিত্তিতে জেনারেটর সংযোগ দিচ্ছে এমন এক প্রকৌশলী ইলেকট্রিক সুইচবোর্ড নিয়ন্ত্রণ করছেন

লেবাননের বাসাবাড়িতে বেসরকারি ভিত্তিতে বিদ্যুতের জেনারেটর সংযোগ দেয় যেসব সংস্থা তারাও এখন বলছে জ্বালানির অভাবে তাদের বিকল্প এই সেবা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়ার মুখে

বিকল্প বেসরকারি যোগানও সঙ্কটে

লেবাননের অনেক মানুষকে জীবনধারণের জন্য এখন ডিজেল চালিত ব্যক্তিগত জেনারেটরের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু জ্বালানি সঙ্কটের ফলে ক্রমশ এসব জেনারেটর চালানোও ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানাচ্ছেন বেসরকারি জেনারেটার সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো।

সারা দেশে বিদ্যুতের চাহিদা মেটানোর বিকল্প ব্যবস্থা হিসাবে ব্যবহৃত এসব জেনারেটরও এখন যথেষ্ট নয়।

বেসরকারি ভিত্তিতে সরবরাহ চালু রাখতে যারা জেনারেটরের ব্যবসা করেন, তারাও বলছেন - জ্বালানি সঙ্কটের কারণে তাদের সেবাও ঝুঁকির মুখে পড়েছে।

শনিবার গোটা দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ পুরো বন্ধ হয়ে যাবার আগেও লেবাননের মানুষ বেশিরভাগ সময়ই দিনে মাত্র দু'ঘণ্টা করে বিদ্যুৎ পাচ্ছিলেন।

লেবাননের রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানিও এক বিবৃতিতে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার খবর নিশ্চিত করেছিল। দেশের এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র একসাথে লেবাননের ৪০% বিদ্যুতের যোগান দিত।

ওই বিবৃতিতে বলা হয় এই দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবার ফলে বিদ্যুতের নেটওয়ার্ক ''পুরো অচল'' হয়ে যায় এবং শনিবারের বিবৃতিতে বলা হয় "এই মুহূর্তে সেগুলো আবার চালু করার কোন সম্ভাবনাই নেই"।

অগাস্টে বন্দর সংলগ্ন এলাকা বিদ্যুতের অভাবে অন্ধকারে ডুবে যায়

অগাস্ট মাসেও বৈরুতে জ্বালানির অভাবে বিদ্যুত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়

আল-জাজিরা খবর দিচ্ছে যে উত্তরাঞ্চলীয় হালবা শহরে রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ কোম্পানির দপ্তরের বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা ত্রিপলি শহরের বাইরে টায়ারে আগুন দিয়ে রাস্তায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেছে।

অগাস্ট ২০২০য়ে বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের প্রভাব মোকাবেলায় দেশটি এখনও হিমশিম খাচ্ছে। ওই বিস্ফোরণে মারা যায় ২১৯ জন এবং আহত হয় আরও ৭ হাজার।বৈরুত বন্দরে ওই বিস্ফোরণের পর সরকার পদত্যাগ করেছিল, যার ফলে দেশটিতে রাজনৈতিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়।

পূর্ববর্তী সেই সরকার পদত্যাগ করার এক বছরেরও বেশি সময় পর সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব নেন নাজিব মিকাতি।

ঘাটতি মোকাবেলার লক্ষ্যে গত মাসে হেজবোল্লাহ গোষ্ঠী ইরান থেকে জ্বালানি এনে দেয় লেবাননে। হেজবোল্লাহ বিরোধীরা তখন বলে যে, গোষ্ঠীটি তাদের প্রভাব বিস্তার করার জন্য জ্বালানি সঙ্কটে সাহায্য করেছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget