ইউরোপ-আমেরিকায় করোনার ঢেউ, ভারতেও বাড়ছে | Corona waves in Europe-America, rising in India
যুক্তরাষ্ট্র, বৃটেন, ফ্রান্স, ইতালি, গ্রিস এবং পর্তুগালে একদিনে করোনাভাইরাসের সর্বোচ্চ সংক্রমণের রেকর্ড হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনকে অতি উচ্চ মাত্রায় ঝুঁকিপূর্ণ বলে ঘোষণা করেছে। ক্রমশ কোভিডের সব থেকে প্রভাবশালী ভ্যারিয়েন্ট হয়ে উঠছে এটি। গত ২৪ ঘন্টায় ফ্রান্সে কোভিড শনাক্ত হয়েছে রেকর্ড এক লাখ ৮০ হাজার জনের। যুক্তরাষ্ট্রেও এ যাবৎকালের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ ৪ লাখ ৪১ হাজার ২৭৮ জন নতুন করে আক্রান্তের রেকর্ড গড়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের প্রধান দুই শহর মুম্বই ও দিল্লিতেও একদিনের ব্যবধানে যথাক্রমে ৭০ ও ৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে কোভিড সংক্রমণ। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা ও বিবিসি।গত সপ্তাহে বিশ্বজুড়ে যে পরিমাণ মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন করোনাভাইরাসে, তার মধ্যে শতকরা ১১ ভাগই ওমিক্রনে আক্রান্ত।
বহু দেশে ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের কারণে ভাইরাসটির বিস্তার দ্রুততর হয়েছে। বহু দেশে এর আগে আধিপত্য বিস্তারকারী ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে ছাড়িয়ে গেছে ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার করোনাভাইরাস মহামারি বিষয়ক সাপ্তাহিক আপডেট তথ্যে এসব কথা বলেছে। তারা বলেছে, বৃটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ কিছু দেশে প্রাধান্য বিস্তার করছে ওমিক্রন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, অব্যাহত তথ্যপ্রমাণ বলছে দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। এতে এই ভ্যারিয়েন্ট আগের ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে ছাড়িয়ে গেছে।
ওদিকে, বুধবার অস্ট্রেলিয়ায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নতুন রেকর্ড করেছে। ওমিক্রনের দ্রুতগতির বিস্তারের কারণে এমন রেকর্ড হচ্ছে। দেশটির জনপ্রিয় রাজ্যগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্রে উপচে পড়ছে মানুষে। নিউ সাউথ ওয়েলসে অবস্থিত অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিডনিতে পরীক্ষা কেন্দ্রগুলোতে ভয়াবহ ভিড়।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে প্রথম রাজ্য হিসেবে কমপক্ষে ৫০ লাখ মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। রাজ্যটি মঙ্গলবার এ তথ্য প্রকাশ করেছে। গত রোববার টেক্সাসে আক্রান্তের মোট সংখ্যা ছিল কমপক্ষে ৪৪ লাখ। ফ্লোরিডায় ৩৯ লাখ। এ পর্যন্ত ক্যালিফোর্নিয়াতে করোনাভাইরাসে মারা গেছেন কমপক্ষে ৭৫ হাজার ৫০০ মানুষ।
যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) তথ্যমতে, সোমবার একদিনে করোনাভাইরাসে নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ৪ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। সিডিসি বলেছে, বড়দিন ও নতুন বছরের পরে এই সংখ্যা কমে আসতে পারে। অন্যদিকে, মঙ্গলবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, ইউরোপে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৫৭ ভাগ। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে তা বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা ৩০ ভাগ। সিডিসির তথ্যমতে, ২৭শে ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে নতুন করে আক্রান্তের সংখ্যা ৪ লাখ ৪১ হাজার ২৭৮। এটাই যুক্তরাষ্ট্রে এযাবৎকালের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ আক্রান্তের সংখ্যা।
এদিকে ভারতের মুম্বই এবং দিল্লিতে একদিনে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে শতকরা ৭০ ও ৫০ ভাগ। বুধবার এই সংক্রমণ আরও বিস্তার লাভ করতে পারে। মঙ্গলবার আর্থিক রাজধানী মুম্বইয়ে নতুন করে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৮০৯ জন। মারা গেছেন তিনজন। সেখানে সংক্রমণের হার অনেক বেশি। ৮ই ডিসেম্বর থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে শতকরা ১৮৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমিতের সংখ্যা। অন্যদিকে ‘হলুদ সতর্কতা’র অধীনে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের পর দিল্লিতে সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এ খবর দিয়ে অনলাইন এনডিটিভি বলেছে, ২রা জুনের পর সেখানে একদিনে সবচেয়ে বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল বলেছেন, এ অবস্থায় যখন মার্কেট ও মলগুলোতে মানুষের ভিড় দেখতে পাই, তখন হতাশ হই আমরা। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে তাহলে আমাদেরকে মার্কেটগুলো বন্ধ করে দিতে হবে। তিনি আরও বলেন, আমি জানি আপনারা সবাই বিধিনিষেধের কারণে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। কিন্তু এ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে, এক্ষেত্রে আমাদের করার কিছু নেই।
নতুন বিধিনিষেধের অধীনে স্কুল, কলেজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল এবং জিম বন্ধ থাকবে। মল এবং দোকানপাট খোলা থাকবে জোড়-বেজোড় ভিত্তিতে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে। দিল্লিতে মেট্রো চলবে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে। এরই মধ্যে শুরু হয়ে গেছে রাত ১০টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ।
অন্যদিকে নতুন করে মহারাষ্ট্রে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ২১৭২ জন। মারা গেছেন ২২ জন। তবে বুধবার সেখানে ওমিক্রনে কারও আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। ২৭শে ডিসেম্বর পর্যন্ত এই রাজ্যে ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৬৭ জন। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপে বলেছেন, যদি রাজ্যে অক্সিজেনের চাহিদা দিনে ৮০০ টনে দাঁড়ায় তাহলেই শুধু লকডাউন দেয়া হবে। সম্প্রতি রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টার মধ্যে প্রকাশ্যে ৫ জনের বেশি মানুষের সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে রাজ্য সরকার।